বাংলাদেশে এ্যামেচার/হ্যাম রেডিও’র যাত্রা ও বর্তমান পরিস্থিতি
তবে হ্যাম রেডিও ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি বাংলাদেশে। একানব্বই সালে দেশ বড়সড় ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়লে তখনকার সরকার হ্যাম রেডিও’র গুরুত্ব বেশি করে বুঝতে পারে। ফলে অনেক নিয়মকানুন বেঁধে দিয়ে ১৯৯১ সালের ২৯ আগস্ট হ্যাম রেডিও স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ সরকার এবং ১২ সেপ্টেম্বর সাবেক বাংলাদেশ তরঙ্গ ও বেতার বোর্ডের ১৮তম সভায় বাংলাদেশে প্রথম এ্যামেচার রেডিও সার্ভিস প্রবর্তণের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বলা যায় তখন থেকে দেশে হ্যাম রেডিও চর্চা শুরু হয়। ১৯৯২ সালে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে হ্যাম রেডিও লাইসেন্স প্রদান শুরু হয় এবং তখন থেকে দেশে অ্যামেচার রেডিও চালু হয়। বাংলাদেশের হ্যামরা ওই সময় থেকে অ্যামেচার রেডিও ব্যবহার করতে পারেন।
পৃথিবীর সব দেশের জন্য রয়েছে আলাদা কল-সাইন। সেটা শুনলেই বোঝা যায় ব্যবহারকারীর পরিচয় এবং তিনি কোন দেশের নাগরিক। সারা পৃথিবীতে একজনের একটি মাত্র কল-সাইন থাকে। বাংলাদেশের হ্যামদের কল সাইন সিয়েরা ২১ ল্যান্ড (S21) দিয়ে শুরু।
আরেকটি সূত্রমতে ১৯৯৫ সালের ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর প্রথমবার এ্যামেচার/হ্যাম রেডিও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৬ সালের ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ তরঙ্গ ও বেতার বোর্ড হতে ফলাফল ঘোষণা করে। এরপর এই বোর্ডের অধীনে একাধিকবার অ্যামেচার রেডিও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে বিটিআরসি হতে ২০০৩ সালে অ্যামেচার রেডিও পরীক্ষা গ্রহণ করা হলেও দু:খজনক ভাবে ২০০৪ সালে আবার লাইসেন্স দেওয়া স্থগিত করা হয়।
পরে অনেক দেনদরবার শেষে ২০০৮ সালে সে স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে ২০০৮ এবং ২০১৩ সালে অ্যামেচার রেডিও পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। ২০১৩ সালের পরীক্ষায় ১৬৬ জন অংশগ্রহণ করে এবং ১৪৭ জন কৃতকার্য হন।
২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অ্যামেচার রেডিও সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নেয়া ২৬৬ জনের মধ্যে ১৯৮ জন কৃতকার্য হয়েছে। কৃতকার্যদের ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি অ্যামেচার রেডিও সার্ভিস সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়।
সর্বশেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২৩ সালের ১২ মে ঢাকা মহাখালী ওয়্যারলেস কম্পাউন্ড টিএন্ডটি মহিলা কলেজে। আবেদনকারীদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে ৪১৫ জন এবং পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৯৮ জন এদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ৩৪৯ জন। উত্তীর্ণ প্রার্থীগণের অনুকূলে ৩০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত এ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়।
বলা বাহুল্য, মন চাইলেই হ্যাম রেডিও ব্যবহার করা যায় না। এ্যামেচার রেডিও অপারেটর হতে চাইলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে লাইসেন্স বা অনুমোদন নিতে হয়। লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে এই লাইসেন্স দেয় বিটিআরসি। বিটিআরসি’র স্পেকট্রাম বিভাগ এ্যামেচার রেডিও সার্ভিস পরীক্ষার আয়োজন করে। পরীক্ষার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিটিআরসির ওয়েবসাইটেও বিজ্ঞপ্তি থাকে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হয়। পরে বিটিআরসি আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র ইস্যু করে। পরীক্ষা হচ্ছে ১০০ নম্বরের। পরীক্ষায় ৫০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকে, প্রতিটির পূর্ণমান ২ করে। পরীক্ষায় বেসিক ইলেকট্রোনিক্স, ফান্ডামেন্ডাল রেডিও ইঞ্জিনিয়ারিং, রেডিও রেগুলেশন, এ্যামেচার রুলস, কোডস ও ব্যবহারিক জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন থাকে। লাইসেন্স পেতে আগ্রহী প্রার্থীকে বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে এবং কমপক্ষে এসএসসি পাস ও ১৮ বছর বয়সী হতে হবে। এছাড়াও এ্যামেচার বেতারযন্ত্র সম্পর্কে কারিগরী জ্ঞান থাকতে হবে।
পরীক্ষায় পাস করলে সনদপত্র দেয় বিটিআরসি। এরপর কল সাইন চেয়ে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে। কল সাইন পাওয়া পর বেতার যন্ত্র আমদানির জন্য এনওসি (ছাড়পত্র) দিবে বিটিআরসি। ওই এনওসি দিয়ে ভেন্ডারের মাধ্যমে বা নিজে নিজেই বেতার যন্ত্র আমদানি করা যাবে এবং বেতার যন্ত্র হাতে পাওয়ার পর এ্যামেচার রেডিওর নিয়ম-নীতি মেনে এ্যামেচার রেডিও চর্চা করা যায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় বাংলাদেশে মোট লাইসেন্সধারী হ্যাম আছেন ৬০০ জন এবং বেইজস্টেশনধারী আছেন প্রায় ৫০জন।
No comments:
Post a Comment